মেয়েটি তখন ক্লাস সিক্সে উঠলো মাত্র। মেয়েটির মা-বাবা বললো, স্কুলে যাবা ঠিক আছে, কিন্তু কোনো ছেলের সাথে কথা বলবা না। মেয়েটি ও তাই করলো। ক্লাস ছুটির পর যেই মেয়েটি বাসায় ফিরছিলো এমন সময় মেয়েটির দিকে মন্দ চোখে তাকিয়ে থাকে, ক্লাস নাইন টেনে পড়ুয়া কয়েকটি ছেলে। সহজ সরল মেয়েটি বাসায় গিয়ে মা কে যখন বললো, " মা সবাই কেমন করে যেন তাকিয়ে থাকে" মেয়েটির পরিবার তখন বললো, কাল থেকে হিজাব করে যাবি। মেয়েটও তাই করলো, হিজাব পরেই গেলো।
এরপর এভাবে দিনের পর দিন যায়, মাঝেমধ্যে বাসে কয়েকজন লোক তাকিয়ে থাকে ই,মেয়েটি বাসায় বললেও পরিবার এর কিছুই করার নেই। ক্লাস সেভেনে ওঠার পর মেয়েটি কয়েকজন বন্ধু বানালো। মেয়ের পরিবার তখন বললো, বন্ধু দের সাথে কোথাও ঘুরতে যাওয়া যাবে না, সোজা বাসায় ফিরবে। না হয় স্কুল যাওয়া বন্ধ করে দিবো। এভাবেই বছরের পর বছর কেটে যায়।
এভাবে ক্লাস টেনে ওঠার পর, একদিন মেয়েটি তার বান্ধবী দের সাথে ঘুরতে যায়। বাসায় ফিরতে দেরি হচ্ছিল। মেয়েটি বাসায় কল দিয়ে জানালো সে ঘুরতে এসেছে, একটু দেরি হবে। বাসায় ফেরার পর, মেয়েটির মা-বাবা মেয়েটিকে মারলো এবং বকা দিলো। মেয়েটি ভীষণ কান্না করলো। মেয়ের মা অন্য রুম থেকে বলছে, "চারপাশের মানুষ কত বাজে কথা বলছে তোর জন্য, শুধু তোর জন্য "। মেয়েটি চুপ করে ছিলো।
এভাবেই মেয়েটি পড়াশোনা চালিয়ে যায়। এসএসসি ও এইচএসসি তে ভালো রেজাল্ট করার পর, মেয়েটি আরো উচ্চশিক্ষা অর্জন করতে চেয়েছিলো। হঠাৎ একদিন মেয়েটির বাবা বললো, ওমুক সাহেবের একমাত্র ছেলের জন্য আমাদের মেয়েটি কে চেয়েছে, বিয়ে দিলে ওরাই পড়াশোনা করাবে বলেছে। মেয়েটি বললো, আগে পড়াশোনা শেষ করি তারপর বিয়ে। মেয়েটির পরিবার শুনে নি।মেয়েটি ও বিয়ে করতে বাধ্য হলো। মেয়েটি আড়ালে কান্না করেছে কিন্তু কেউ দেখে নি।
বিয়ের পর মেয়ে কে যখন পড়তে দেওয়া হয় নি,কিংবা সাংসারিক ব্যস্ততার কারণে মেয়েটি যখন পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারে নি,তখন মা কে সে কথাটি বলছিলো। কিন্তু মা-বাবা বললো, মেয়েদের আসল জীবন হলো সংসার জীবন। এরপর একদিন হঠাৎ করেই একটি চিঠি লিখে পালিয়ে যায় মেয়েটি, চিঠিতে লিখা ছিলো-
"বাবা- মা তোমরা কখনও ই আমাকে সন্তান মনে করো নি, মনে করেছো মেয়ে। তাইতো ক্লাস সেভেনে যখন তোমাদেরই আরেক সন্তান, আমার ভাই ঘুরাঘুরি করেছিলো বন্ধুদের সাথে তখন আমি ছিলাম সীমানা বন্দী। ক্লাস টেনে ঘুরতে যাওয়ার পর আমাকে মেরেছিলে, কিন্তু ভাই যখন রাত ১০ টায় ফিরতো প্রতিদিন ওকে মারো নি। আচ্ছা মানলাম, আমার ভালো চাও, তাই আমাকে এসব করতে দাও নি। কিন্তু পড়াশোনা, ওটা তো আমি চালিয়ে যেতে চেয়েছি, আমাকে বিয়ে দিলে কেনো? আমি কী তোমাদের কেউ না, যে বিদায় করতে পারলেই পারো। আমার ভাই যখন খারাপ রেজাল্ট করেও এমবিএ করলো, তখন আমি করলাম মাত্র ইন্টার পাশ। ঐ যে বললাম, তোমরা আমাকে ভেবেছো মেয়ে, সন্তান ভাবো নি কখনও। জানো বিয়ের পর আমি রোজ একটা প্রার্থনা করি, তা হলো আমার সব সন্তান যেনো ছেলে হয়। কারণ আমি চাই না, আমার মেয়ে হলে ওরাও আমার মতো বন্দী জীবন কাটাক। ভালো থেকো মা বাবা, আমি শশুর বাড়ি চলে যাচ্ছি, আর আসবো না তোমাদের কাছে।"
মেয়েদের জীবনে মেয়েদের কোনো কষ্ট থাকলে সর্বপ্রথম যে কষ্ট টা থাকে তা হলো, ওদের মা-বাবা কখনোই ওদের শুধু সন্তান ভাবে না। ভাবে মেয়ে হিসেবে। যার কারণে ওদের পথে শুধুই বাঁধা। এইতো কিছুদিন আগে রাস্তার পাশে একজন মা বলছিলো -
"হুজুরে ও রেপ করে,পুরোহিত এ ও করে। বোরকা পরলেও রেপ করে, না পরলেও করে। দোষ খালি মাইয়ার ই হয়। এখন ওরা এটাও বলুক, মেয়ের জন্ম নেওয়াই দোষ, পুরুষ দেখবে যে তাই। চরিত্রহীন বেশি হয় পুরুষ, মেয়ে হয় খুব কম।"
ধর্ম মেয়েদের সম্মান করা শেখায়, রেপ/ ইভটিজিং করলে তুই যে ই হ,তুই জাহান্নামি,ওসবের দোহাই হিসেবে আমাকে ধর্মের জ্ঞান দিস না।
লিখাঃ Sajnul ভাই
0 Comments