২০১৫ সালে শাহরুখ খান ভারতের মৌলবাদী হিন্দু গ্রুপগুলোর কর্মকান্ডের উপর মন্তব্য করেছিলেন, "ভারতে এক্সট্রিম ইনটলারেন্স তথা তীব্র পরমত অসহীষ্ণুতা আছে। 


তাঁর এই মন্তব্য বর্তমানে ক্ষমতাসীন দল বিজেপি ভালোভাবে নেয় নি। তখনকার সাংসদ এবং বর্তমানে উত্তর প্রদেশের চিফ মিনিস্টার (!) যোগী আদিত্যনাথ শাহরুখকে উদ্দেশ্য করে বলেন, "শাহরুখ ভারতে থাকলেও তার অন্তর পড়ে আছে পাকিস্তানে। সে পাকিস্তানের ট্যুরিজমকে প্রমোট করতে চায়...  যদি ভারতীয়রা তার সিনেমা বয়কট করা শুরু করে দেয়, তাহলে সে 'রাস্তা'র অন্যসব সাধারণ মুসলিমদের একজন হয়ে যাবে। আমার মনে হয় শাহরুখ এবং মুম্বাই হামলার পরিকল্পনাকারী হাফিজ সাইয়্যিদ এর মধ্যে কোন পার্থক্য নেই।" 


এই মন্তব্য থেকেই বুঝা যায়, কি পরিমাণ রাগ বিজেপি শাহরুখ এর উপর পুষে রেখেছিলো... এবং কি পরিমাণ বিদ্বেষ ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপি মুসলিমদের প্রতি পোষণ করে। এদের কেউ বিরোধিতা করলেই সে এন্টি ন্যাশনালিস্ট, দেশদ্রোহী। ভারত মিডিয়ায়, সিনেমার আইটেম গানে এগিয়ে গেছে শুধু... এরা ভিতরে ভিতরে পিছিয়ে রয়ে গেছে হাজার বছর। 


সুযোগ এবং সময়মতো তারা শাহরুখকে এটাক করেছে... এনবিসি রেইডের নামে রেইড করেছে বিজেপির নেতা, আরিয়ানের কাছে ড্রাগ পাওয়া না গেলেও তাকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে গেছে বিজেপি'র নেতা। বেইলেবল অফেন্সকে নন বেইলেবল অফেন্স বানিয়ে কাস্টশি বাড়িয়ে লেলিয়ে দিয়েছে মোদি'র পুষ্ট 'গোদি মিডিয়া'কে দিনরাত রিপোর্ট বানিয়ে ব্রেইনওয়াশের কাজে। ব্যস, কাজ হয়ে গেলো। 


হুমায়ুন আজাদ'কে মানুষ সহ্য করতে না পারলেও ভদ্রলোক কিছু কথা ঠিক বলেছিলেন। যেগুলো অক্ষরে অক্ষরে ফলেছে। তার মধ্যে সবচেয়ে দামি কথা হলো-


"আমি জানি সব কিছু নষ্টদের অধিকারে যাবে।

নষ্টদের দানবমুঠোতে ধরা পড়বে মানবিক

সব সংঘ-পরিষদ; চ’লে যাবে, অত্যন্ত উল্লাসে

চ’লে যাবে এই সমাজ-সভ্যতা-সমস্ত দলিল

নষ্টদের অধিকারে ধুয়েমুছে"


সবকিছু আসলেই নষ্টদের অধিকারে গেছে। যেভাবে গেছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ডেমোক্রেসি গোমূত্র পান করা এবং গায়ে গোবর মাখা যোগী'দের হাতে। বাংলাদেশ এবং ভারত দুই ধর্মের দুই মৌলবাদী গোষ্টির হাত ধরে এগুচ্ছে একই পরিণতির দিকে।


ভারত একদিন বুঝবে, এই গোমূত্রপায়ী যোগী'র চেয়ে শাহরুখ ভারতের জন্য অনেক বড় সম্পদ ছিলো।

মোদি'কে ভারতের বাইরে যতজন চিনে, তার চেয়ে লক্ষ-কোটি বেশি মানুষ চিনে শাহরুখ'কে। 


উত্তর প্রদেশ কিংবা বিহারের মোদিভক্তরা জানে না পৃথিবীর ১৯৫ টি দেশের প্রতিটি দেশের মানুষ তাঁর নাম জানে, কিছু কিছু দেশে হি, হিমসেলফ ইজ বিগার দ্যান ইন্ডিয়া।

জার্মানি, ইউকে, আমেরিকায় তাঁর সিনেমা হাউজফুল হয়। 


বলিউড থাকুক আর না থাকুক... ভারতের বাইরে শাহরুখের ব্রুকলিন ব্রিজে দু'বাহু ছড়িয়ে দেয়া আর ট্রেনের ছাদে লাল জ্যাকেট-খাকি প্যান্টের কম্বিনেশন যুগে যুগে সব দেশে আইকনিক থেকে যাবে। 


ছেলের একিউজিশন, যেটা এখনো নট প্রুভেন গিল্টি... সেই দোষের জন্য শাহরুখের সমস্ত বিজ্ঞাপন সরিয়ে নিয়েছে 'Byju's Learning App'. কি হাস্যকর এবং সেলুকাস!

হয়তো, হি উইল নট ফাইট ব্যাক... শীঘ্রই ভারত এবং ভারতীয় সিনেমা জগত ছেড়ে লন্ডন পাড়ি জমাবেন শাহরুখ। মোদি-যোগী সমর্থকরা উল্লাসে ফেটে পড়বে।

কার কি ক্ষতি হলো, সেটার হিসাব-নিকাশ হয়তো করা হবে আজ থেকে ২০ বছর পর কোন একদিন গিয়ে। 


আমি ভাগ্যবান, I lived through the King's legacy. I was his fan, I got to love him, celebrate him. আমার পরবর্তী প্রজন্মকে আমি দেখাতে পারবো না আমার ফ্যান হওয়ার উন্মাদনা। 


সে চলে যাবে, যাক। তাঁর এই অভিমান নিয়ে চলে যাবার জন্য'ই সঞ্জীব চৌধুরী গেয়েছিলেন- 


"পাগল রাগ করে চলে যাবে খুঁজেও পাবে না,

পাগল কষ্ট চেপে চলে যাবে ফিরেও আসবে না...!"


কার্টেসি: আরিফ মঈনুদ্দিন