একজন ব্যাক্তির মুসলিম পরিচয়ের একদম মূল যে বিষয়টিকে কেন্দ্র করে তা হলো ঈমান আর ঈমান থাকে বলেই তিনি নিঃসঙ্কচে বলতে পারেন,"আল্লাহ ছাড়া কোনো মা'বুদ নেই এবং মুহাম্মদ ﷺ আল্লাহর রাসূল।"


তবে বিস্তৃতভাবে বলতে গেলে বেশ কয়েকটা জিনিসের প্রতি বিশ্বাসের সমন্বয় হলো ঈমান। নবীজী ﷺ জীবরাঈল আঃ এর প্রশ্নের উত্তরে বলেন,

"ঈমান হল,

 আপনি বিশ্বাস রাখবেন আল্লাহর প্রতি,

 তাঁর ফেরেশতাগণের প্রতি, 

ক্বিয়ামাতের দিন তাঁর সঙ্গে সাক্ষাতের প্রতি এবং তাঁর রসূলগণের প্রতি। 

আপনি আরো বিশ্বাস রাখবেন পুনরুত্থানের প্রতি।"[১]


অপরদিকে আল্লাহ পাক বলেন,

"রাসূল তার নিকট তার রবের পক্ষ থেকে নাযিলকৃত বিষয়ের প্রতি ঈমান এনেছে, আর মুমিনগণও। 

প্রত্যেকে ঈমান এনেছে আল্লাহর উপর, তাঁর ফেরেশতাকুল, কিতাবসমূহ ও তাঁর রাসূলগণের উপর, আমরা তাঁর রাসূলগণের কারও মধ্যে তারতম্য করি না।"[২]


অর্থাৎ,ঈমান হচ্ছে ইসলামে প্রবেশের প্রথম দরজা আর সেই দরজার মূলে রয়েছে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সা এর প্রতি বিশ্বাস।এর সহজ উপায় হলো কুরআনের বাণী ও নবীজী সা এর হাদীসের প্রতি বিশ্বাস ও আমল। 


এরূপ বিশ্বাস ও আমলকে কাজে রূপ দিতে গিয়ে একজন মুমিন বান্দার কিরূপ আচরণ হ‌ওয়া দরকার সে সম্পর্কে আল্লাহ পাক বলেন,

 "আর তারা বলে, আমরা শুনলাম এবং মানলাম।

 হে আমাদের রব! আমরা আপনারই ক্ষমা প্রার্থনা করি, আর আপনার দিকেই প্রত্যাবর্তনস্থল।"[২]


এই একটা কথা "শুনলাম এবং মানলাম" ই নির্ধারণ করে দেয় কিরূপ আচরণ হ‌ওয়া উচিত ইসলামের প্রাথমিক ও মূল স্তম্ভ ঈমানের প্রতি।আমরা ইসলামের আদেশ-নিষেধ, বিধিবিধান সবকিছু মেনে নিবো কোনো প্রশ্ন ব্যাতিরেকে।এটাই নিজেকে একজন মুসলিম হিসেবে নিরাপদ রাখার সর্বোত্তম উপায়।


মনে রাখবেন, আল্লাহর বিধান আর নবীজী ﷺ এর দেখানো তরিকার প্রতি আপনার মনে যদি কোনো রকম সন্দেহের উদ্রেক হয় তবে তা শয়তানের ওয়াস‌ওয়াসা ব্যাতীত কিছুই নয়। শয়তান তার ওয়াদা পূরণে একনিষ্ঠ হয়ে ছক কষে আপনার আমার মনে সন্দেহের দানা বুনে দেয়‌।প্রশ্ন তুলবে, আমাদের আমলগুলোর তরিকা নিয়েও,ঠিক হলো কি না। আবার কখনও এভাবেও ধোঁকা দেয় যদি ঠিক নাই হয় তবে আমল করবো কেন।


সাবধান!

এরূপ পাতা ফাঁদে পা দেওয়া যাবেনা। আল্লাহ পাক আমাদের দুর্বলতা জানেন আর তাই তিনি সতর্ক করে দিয়েছেন,

"তারাই মুমিন যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনে, পরে সন্দেহ পোষণ করে না এবং জীবন ও সম্পদ দ্বারা আল্লাহর পথে জিহাদ করে তারাই সত্যনিষ্ঠ।"[৩]


 অর্থাৎ, শুনলাম ও মানলাম এবং কোনো সন্দেহ পোষণ করলাম না আর এতেই পোক্ত হবে ঈমানের গোড়া। অহেতুক প্রশ্ন আর সন্দেহ থেকে নিজেকে দূরে রাখাই ঈমান বাঁচানোর উপায়।


আমাদের অনেকেরই এরকম সন্দেহ ও জানার আগ্রহ থেকে ঈমান নড়বড় হয়ে পড়ে আর পরবর্তীতে তো একসময় অনেকে বলেই বসে আমরা না দেখে কিভাবে মানি,অনেকে তো যুক্তিও খোঁজে।

আল্লাহ মাফ করুন আমাদের।দ্বীনের মূল বিষয়ে বিশ্বাসে চোখে দেখা কিংবা কানে শুনতে হয় না, আল্লাহ পাকের বাণী এসেছে আর নবীজী সা তা বর্ণনা করেছেন।বাস্ এটাই সত্য আর আমি আপনি তা মেনে নিলাম। এখানে প্রশ্নের সুযোগ নেই।


নবীজী ﷺ তাঁর সাহাবীদের বলতেন,

"তোমরা আমাকে প্রশ্ন করা থেকে বিরত থাক, যে  পর্যন্ত না আমি তোমাদের কিছু বলি। কেননা, তোমাদের আগে যারা ছিল, তারা তাদের নবীদেরকে অধিক অধিক প্রশ্ন করা ও নবীদের সঙ্গে মতভেদের জন্যই ধ্বংস হয়েছে।


 তাই আমি যখন তোমাদেরকে কোন ব্যাপারে নিষেধ করি, তখন তা থেকে বেঁচে থাক। আর যদি কোন বিষয়ে আদেশ করি তাহলে সাধ্য অনুসারে মেনে চল।"[৪]

  

অর্থাৎ, ঈমানের মূল বিষয় নিয়ে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সা দেখানো পথ নিয়ে প্রশ্নের সুযোগ নেই।এতেই আমাদের জন্য কল্যাণ নিহিত আছে।


তাই আমরা অনর্থক প্রশ্ন না করি,যুক্তি দিয়ে সবকিছু বিচার করতে না যাই। আমাদের সীমিত জ্ঞানের বাইরেও অনেক কিছু আছে যা আমরা জানি তো না বরং ভেবেও দেখি নি।তাই সেদিকে পা বাড়ানো, শয়তানের ওয়াস‌ওয়াসার শিকার হ‌ওয়ার সমতুল্য।এতে আপনার আমার হাত ছাড়া হয়ে যেতে পারে মহামূল্যবান সম্পদ ঈমান,যার সম্পর্কে নবীজী ﷺ বলেন,

"যার অন্তরে সরিষার দানা পরিমাণ ঈমান থাকবে সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে না।[৫] 

  

অত‌এব, ইসলামের উপর অটল থাকতে, নিজেকে জান্নাতের বাগানে জায়গা দিতে ঈমানকে আকড়ে ধরে রাখার বিকল্প নেই আর ঈমানকে আকড়ে ধরে রাখতে অনর্থক প্রশ্ন ব্যাতিরেকে "শুনলাম ও মানলাম" থিওরীর বিকল্প উপায় নেই।


[১] সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৫০

[২] সূরা বাকারা:আয়াত নং ২৮৫

[৩] সূরা আল-হুজুরাত: আয়াত নং ১৫

[৪] সহিহ বুখারী: হাদিস নং ৭২৮৮

[৫] সহিহ মুসলিম:হাদিস নং ১৬৭


|| নির্দ্বিধায় শুনলাম ও মানলাম ||